নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জানুয়ারি।। বনজ সম্পদকে ব্যবহার করে জনজাতি পরিবারগুলি যাতে জীবিকা নির্বাহ করার সুুযোগ পায় সেই লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে৷ বননির্ভর জনজাতি অংশের মানুষ যাতে আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভর হতে পারে সেই দিশায় বন দপ্তরকে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে৷ আজ সচিবালয়ে বনদপ্তরের পর্যালোচনা সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সভায় বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়াও উপস্থিত ছিলেন৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে৷ এক্ষেত্রে প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট আধিকারিককে দায়িত্ব দিতে হবে৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বনায়নের ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে উৎপাদনযোগ্য হয়ে উঠে এমন ক্ষেত্রগুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ফুলের চাহিদাও রয়েছে৷ কমসময়ে রোজগারের ব্যবস্থা হতে পারে ফুলচাষের মাধ্যমে৷ এজন্য বড় পরিসরে সব ঋতুতেই ফুল ফুটে এমন বিভিন্ন প্রজাতির ফুলচাষ করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ পাশাপাশি সুুপারি ও গোলমরিচ চাষ করার জন্য তিনি বন দপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন৷ একই সঙ্গে তিনি সজনে চাষ করার জন্য দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে বলেন৷ ইকো-ট্যুরিজমকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি বন দপ্তরকে বলেছেন৷ উন্নয়নমূলক কাজ রূপায়ণের ক্ষেত্রে ফরেস্ট ক্লিয়ারেন্স যেন বাধার সৃষ্টি না করে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করার জন্যও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন৷
বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বনদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে আলোকপাত করেন৷ বনজ এলাকা ও বনজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ বনজ এলাকায় পাট্টাপ্রাপক সুুবিধাভোগীদের পাট্টাজমি চিহ্ণিতকরণের কাজে গতি আনতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন৷ মুখ্যসচিব মনোজ কুমার নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য বনদপ্তরকে আন্তরিকভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন৷ সভায় অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এস কে রাকেশও বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন ও মতামত প্রকাশ করেন৷ এদিনের সভায় মুখ্য বনসংরক্ষক ড. অলিন্দ রস্তোগী বনদপ্তরের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি, তার বাস্তবায়ন, অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন৷ পর্যালোচনা সভায় বনদপ্তরের ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের পর্যালোচনাসভায় গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কতটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে কতটা এখনও সম্ভব হয়নি সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়৷ পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও সভায় আলোচনা করা হয়৷ আলোচনা থেকে জানা যায়, বনজ এলাকায় রেগার মাধ্যমে ২০১৮-১৯ বছরে ৮৮টি চেকড্যাম তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ চলতি বছরে রেগায় ৭৮টি চেকড্যাম তৈরির আনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ চলতি বছরে ৩১৯ কিমি রিভার সাইড প্ল্যান্টেশন এবং ৩২২ কিমি রোড সাইড প্ল্যান্টেশনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে সভায় মুখ্য বনসংরক্ষক জানান৷ তিনি জানান বাঁশচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩৫০ হেক্টর৷ ১৫২৩ হেক্টর এলাকায় বাঁশচাষ করা হয়েছে৷ তাছাড়াও পলিব্যাগ নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে৷ বনজ এলাকায় মৎস্যচাষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি মাতাবাড়ি ব্লকে পাইলট প্রজেক্টের বিষয়ে উল্লেখ করেন৷ এ সম্পর্কে ড. রস্তোগী জানান, এই ব্লকের ২৪.৬ হেক্টর জলাশয়ে মৎস্যচাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এজন্য ৫৮টি ইউনিটকে ক্লাস্টার হিসাবে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ এই ইউনিটগুলিতে আগামী অর্থবছরের মধ্যে মাছের উৎপাদন তিনগুণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও কল্যাণপুর, করবুক এবং রাজনগর এলাকায়ও এভাবে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান৷ জে এফ এম কমিটিকে যুক্ত করেই এই মৎস্যচাষ করা হবে বলে তিনি জানান৷ ড. রস্তোগী জানান, বন এলাকায় বর্তমানে ৩৬১০টি জলাশয় রয়েছে৷ আয়তনে ২৪৪৯ হেক্টর৷ এরমধ্যে বনদপ্তর ও মৎস্য দপ্তর যৌথভাবে সার্ভের মাধ্যমে ৫৫৬টি জলাশয়ে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাছচাষ করবে৷ এই জলাশয়গুলিতে জে এফ এম সি ও স্ব-সহায়ক দলের মাধ্যমে মাছচাষ করা হবে বলে তিনি জানান৷ এছাড়াও এদিনের সভায় জলশক্তি অভিযান, রোডসাইড বিউটিফিকেশন, দপ্তরের নতুন কর্মসূচি, কদমতলা ব্লকে আগর চাষের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ এদিনের সভায় সচিব কিরণ গিত্যে, বিশেষ সচিব অপূর্ব রায় সহ বনদপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও অন্যান্য আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷