আনন্দবাজার থানা প্রাঙ্গণে আশ্রিত বাঙালি উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

নতুন প্রতিনিধি, কাঞ্চনপুর, ২৪ ডিসেম্বর ৷৷ হিংসার ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সামনেই শিউরে উঠছিলেন আনন্দবাজার থানা প্রাঙ্গণে আশ্রিত বাঙালি উদ্বাস্তুরা৷ ত্রিপুরা বনধে হিংসায় তাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণভয়ে আনন্দবাজার থানা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে পেয়েও ভয় কাটেনি তাঁদের৷ তাই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কেউ বাদ যাননি, যাঁরা আজ সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেননি৷মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের অভয় দিয়েছেন, বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করার সাথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুনিশ্চিতের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন৷ তবুও, বাঙালি উদ্বাস্তুরা বাড়ি ফিরে যেতে তিনটি শর্ত রেখেছেন৷ না-হলে মুখ্যমন্ত্রীর সাথেই তাঁরা আনন্দবাজার ছেড়ে চলে যাবেন, সমসুরে দাবি তুলেন বাঙালি উদ্বাস্তুরা৷ শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা রেখে সমস্ত এলাকা তাঁরা ঘুরে দেখালেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, প্রত্যেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন৷ সাথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করা হবে৷প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুর মহকুমার কাঞ্চনছড়া এডিসি ভিলেজ এবং গছিরামপাড়া এডিসি ভিলেজ পরিদর্শনে আসেন৷ পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবারকুমার জমাতিয়া, বিধায়ক প্রেমকুমার রিয়াং, অতিরিক্ত সচিব ড় মিলিন্দ রামটেকে, উত্তর ত্রিপুরা জেলাশাসক রাভাল হেমেন্দ্র কুমার, জেলা পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী, মহকুমাশাসক ও বিডিওগণ৷এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রথমে মহকুমার কাঞ্চনছড়া এডিসি ভিলেজের তাকবই হাথাইপাড়া পরিদর্শনে আসেন৷ সেখানে তিনি পারসেনবতী রিয়াং, বিমানজয় রিয়াং, তাংবতী রিয়াং, বুধেরুং রিয়াং-এর সাথে কথা বলেন এবং তাদের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হন৷ মুখ্যমন্ত্রী তাদের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন৷ তাকবই হাথাইপাড়া থেকে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রনগরের জয়দীপ দেবনাথ ও প্রণতিবালা দেবের সাথে কথা বলেন৷
সেখান থেকে গছিরামপাড়া যাওয়ার পথে কাঞ্চনপুর হেলিপ্যাডে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কাঞ্চনপুর মিশ্র জনবসতি এলাকা৷ এখানকার জাতি-জনজাতি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির এক ঐতিহ্য রয়েছে৷ এই ঐতিহ্যের ধারাকে অক্ষুণ্ণ্ রাখতে সব অংশের মানুষকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ তিনি বলেন, কাঞ্চনপুর মহকুমার মানুষ শান্তি ও উন্নয়ন চান৷ শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়৷মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এর পর গছিরামপাড়া পরিদর্শনে আসেন৷ গছিরামপাড়ায় বিধায়ক প্রেমকুমার রিয়াং-এর বাড়িতেও যান তিনি৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী আনন্দবাজার থানা প্রাঙ্গণে এলাকাবাসীর সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন৷ মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনসাধারণ তাঁদের বিভিন্ন সমস্যাগুলি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন৷ এদিন মতবিনিময় সভায় জনৈকা বৃদ্ধা হিংসার বর্ণনা দিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ ভয় এখনও তাঁর চোখেমুখে ফুটে উঠছিল৷ তাঁর একাকী বার্ধক্য জীবনে এমন হিংসার সম্মুখীন হতে হবে তা তিনি স্বপ্ণে ভাবেননি বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন৷আরও অনেকেই তাঁদের সাথে ঘটনাগুলির বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন৷ বাঙালি উদ্বাস্তুদের মধ্যে জনৈক যুবক মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের সকলের পক্ষ থেকে দাবি সনদ পেশ করেছেন৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বলেন, তিনটি শর্ত মানলে তবেই তারা বাড়ি ফিরে যাবেন৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরা বনধে হিংসায় সকলের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প এবং আনন্দবাজার থেকে দশদা রাস্তায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই হবে৷ তাঁর সাফ কথা, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে৷ না-হলে মুখ্যমন্ত্রীর সাথেই তাঁরা আনন্দবাজার ছেড়ে চলে যাবেন৷ওই যুবকের বক্তব্য, পুলিশ এবং টিএসআর-র প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না৷ বনধে পুলিশ- টিএসআর থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে এসে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে৷ তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ২০০০ এবং ২০১৬ সালে তাঁদের এমনই হিংসার শিকার হতে হয়েছে৷ তাই, নতুন করে ওই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ধৈর্য ও মানসিকতা কোনওটাই নেই তাঁদের৷ বাঙালি উদ্বাস্তুরা এদিন তাঁদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন৷ তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকপত্র তুলে দিয়েছেন৷মতবিনিময় সভায় সমস্ত বক্তব্য শুনে মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় জাতি-জনজাতি উভয় অংশের মানুষকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানান৷ পাশাপাশি বাঙালি উদ্বাস্তুদের নিরাপদে ঘরে ফেরা সুনিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ তিনি বাঙালি উদ্বাস্তুদের অভয় দিয়ে বলেন, এখন বিএসএফ সম্পূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে৷ তাছাড়া, সিআরপিএফ জওয়ানরাও নিরাপত্তা দেবেন৷ তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পেয়েছি৷ সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷ সাথে তিনি ত্রিপুরা বনধে সন্ত্রাসের জন্য দোষীদের চিহ্ণিত করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন৷ পুলিশ প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া দাওয়াই, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় দল বিচার করবেন না৷ হিংসার জন্য যে দায়ী তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিন৷এদিকে, মতবিনিময় সভা শেষে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা বনধে হিংসার ঘটনায় আনন্দবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান, বাড়িঘর পরিদর্শন করেন৷ তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেন এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেন৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?