নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ ডিসেম্বর৷৷ রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে মৌমাছি পালন-মৃৎশিল্প-চর্মশিল্পের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ রাজ্যে এই শিল্পগুলির বিকাশের সম্ভাবনাও রয়েছে৷ তাছাড়া, গ্রামীণ এলাকার মানুষ এই সমস্ত শিল্পের সাথেও যুক্ত৷ তাঁদের কাছে ওই শিল্প জীবিকা নির্বাহেরও একটা অন্যতম মাধ্যম৷ তাই রাজ্যে এ-সমস্ত শিল্পের বিকাশে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ সোমবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২ নম্বর হল-এ ভারত সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্পমন্ত্রকের অধীন খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত মৌমাছি পালনের বাক্স, চর্মশিল্পীদের শিল্পসামগ্রী এবং মৃৎশিল্পীদের ইলেকট্রিক পটার হুইল বিতরণী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০০ জন মৌমাছি পালক, ১০০ জন চর্মশিল্পী এবং ১০০ জন মৃৎশিল্পীর মধ্যে মৌমাছি পালনের বাক্স, সহায়ক শিল্পসামগ্রী এবং ইলেকট্রিক পটার হুইল দেওয়া হয়েছে৷এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে একসময় অবহেলা করা হত৷ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর এই অঞ্চলের রাজ্যগুলিকে আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার জন্য বাজেটে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করেছেন৷ তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নানা রকমের সেমিনারের আয়োজন করা হয়৷ কিন্তু প্রকৃতিরই অংশ মৌমাছি প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন বজায় রাখে তেমনি রোজগারের সুযোগও সৃষ্টি করে৷ তাই আমাদের দায়িত্ব এই প্রজাতিকে রক্ষা করা৷ মৌমাছিকে জীবিত রেখে রোজগারের প্রক্রিয়াগত কৌশল শিখতে হবে৷ এর জন্য ত্রিপুরায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে খাদি গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ৷মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে স্বরোজগারীর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকারীও তৈরি হচ্ছে৷ ব্যাংকও ঋণ প্রদান করছে৷ ভারত সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্পমন্ত্রকের মাধ্যমে ভরতুকিতে বিভিন্ন প্রকল্প রাজ্যে লাগু হচ্ছে৷ তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মৃৎশিল্প, মৌমাছি প্রতিপালন এবং সংরক্ষণ-সহ বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের নিজের আশপাশের ব্যক্তিদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হতে আহ্বান জানান৷ একই সাথে তিনি ক্লাস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরাকে স্বনির্ভর এবং নতুন দিশায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার৷ এই লক্ষ্যে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশনের চেয়ারম্যান বিনয় কুমার সাক্সেনা বলেন, ত্রিপুরার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে, যাতে অধিক পরিমাণে রোজগার সৃষ্টি করা যায়৷ তিনি বলেন, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ণ ছিল দেশের সমস্ত গ্রামের উন্নয়ন৷ গ্রামের উন্নয়নের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের উন্নয়ন৷ বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী সেই স্বপ্ণ বাস্তবায়ণে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, মৌমাছি প্রতিপালনের সাথে যুক্তরা রোজগার বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের পরিবেশ রক্ষার্থেও বড় ভূমিকা নিতে পারেন৷ সারা দেশে এখন পর্যন্ত এর জন্য ১ লক্ষ ৩৫ হাজার মৌমাছি বাক্স বিলি করা হয়েছে৷ মৌমাছি পালনের বিভিন্ন সুফলগুলি তিনি তার ভাষণে তুলে ধরেন৷ মৃৎশিল্পের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, গত বছর দেশে ১৩ হাজার ইলেকট্রিক পটার হুইল দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে প্রায় ৬৫ হাজার লোকের রোজগারের ব্যবস্থা হয়েছে৷ এই বছর ৩০ হাজার ইলেকট্রিক পটার হুইল দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, বিকল্প অর্থনীতির মাধ্যমে রোজগার সৃষ্টি করার ওপর বর্তমান রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়েছে৷ তার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার৷ আরও রোজগার সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে রাজ্যের খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ উদ্যোগ নিচ্ছে৷ রাজ্যের উৎপাদিত মধু, আদা, হলুদ, গুলমরিচকে বাজারজাতকরণের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে সরকার৷ এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মৌমাছি পালক, মৃৎশিল্পী এবং চর্মশিল্পীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন৷