নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ ডিসেম্বর৷৷ নারী নিরাপত্তার প্রশ্ণে ত্রিপুরাবাসীকে আগামী ৩ জানুয়ারির মিছিলে শামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ৷ ত্রিপুরাবাসীর কাছে নারীর নিরাপত্তায় সৈনিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
প্রসঙ্গত, গতকাল জনৈক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় তিনি আজ শনিবার জিবি হাসপাতালে ধর্ষিতার খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি সাংবাদিকদের কাছে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন৷ এর পরই তিনি নারী নিরাপত্তার প্রশ্ণে মিছিলের ডাক দেন৷
এক ফেসবুক বার্তায় আজ তিনি বলেন, রূপ-রস-গন্ধে এই বসুন্ধরা বার বার তার ঐতিহ্যে অনড় থেকেছে৷ আমাদের দেশ নানা জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মিলনভূমি৷ এই দেশকে বেগবান করেছে হাজারো-লাখো মানুষের শ্রম, স্বপ্ণ আর দূরদর্শিতা৷ তাঁর বক্তব্যের সাথে সকলে একমত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷ আক্ষেপ করে সুদীপ বলেন, মুনি-ঋষিদের কাঙ্ক্ষিত স্বদেশ এখন রক্তাক্ত৷ নানাভাবে আহত৷ এই ভূখণ্ডের দিকে দিকে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি এখন সকাল-বিকালের ভয়াবহতা হিসেবে পরিণত হয়েছে৷ সাথে তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, দিকে দিকে দেশের নারী অপমানিত, লাঞ্ছিত, নিগৃহীত হচ্ছেন৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মা-মেয়ে-বোনেরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন নানা সময়৷ তাঁর দাবি, এমন পরিস্থিতিতে পিছিয়ে নেই আমাদের রাজ্যও৷ ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত প্রভাতী কাগজগুলো হাতে নিলে এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চোখ রাখলেই প্রায় প্রতিদিন ধর্ষণ, খুন, বধূহত্যা, পণ সংক্রান্ত অত্যাচার ইত্যাদির খবর চোখে পড়ে৷ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ৩ বছরের শিশু থেকে ৮২ বছরের বৃদ্ধা, কেউই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না৷ অথচ, আমরা সকলে নিজেদের ড্রইংরুমে বসে প্রতিবাদ, অন্যায়, ব্যভিচার ইত্যাদি শব্দগুলো নিয়ে মেতে থাকি৷ এ প্রসঙ্গে তাঁর ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান, সময় হয়েছে৷ আরও একটি বছর শেষ৷ নতুন একটি বছরে শুরু৷ আসুন, প্রতিজ্ঞা করি, আমরা আরও ঐক্যবদ্ধ হব৷ আমাদের রাজ্য তথা দেশের মা-বোনদের সম্মান রক্ষায় নিজেদের সমস্ত বোধকে জাগ্রত রাখব৷ তাঁর আরও আবেদন, ত্রিপুরার প্রতিটি কোণায় আমরা মা-বোনদের সম্মান রক্ষায় নিজেরাই এক-একজন কাণ্ডারি হয়ে উঠব৷ বন্ধ করব ধর্ষণ, পণের কারণে বধূহত্যা৷ নারীর অপমান, লাঞ্ছনা, শ্লীলতাহানিতে নিজেরাই প্রতিরোধের ব্যরিকেড তৈরি করব৷ বিধায়কের মতে, নতুন বছরে এটাই হবে আমাদের অন্যতম প্রধান সংকল্প ও প্রতিজ্ঞা৷ নিজের কাছে নিজের অঙ্গীকার৷ তাই তিনি আগামী ৩ জানুয়ারি আগরতলা শহরে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণে সকাল ১১টায় একটি অরাজনৈতিক জমায়েত ও পথ মিছিলের আহ্বান জানিয়েছেন৷ রাজ্যের সকল অংশের নাগরিকদের কাছে তিনি অনুরোধ জানান, ওই মিছিলে সমগ্র ত্রিপুরাবাসী অংশগ্রহণ করুন৷ তাঁর দাবি, আপনারা ওইদিন সমাজকে পাল্টে দেওয়ার, শুধরে দেওয়ার সৈনিক হয়ে উঠুন৷ তিনি মনে করেন, আমাদের চারপাশে সংগঠিত অন্যায়ের নিত্য চিত্রগুলোকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিতে পারবেন ত্রিপুরাবাসী৷ তাঁর বিশ্বাস, প্রতিজ্ঞায় মুষ্টিবদ্ধ ভাবনাকে জাগিয়ে রাখার এই সামান্য উদ্যোগে ত্রিপুরাবাসী পাশে থাকবেন এবং প্রতিবাদে প্রতিরোধে, শুভশক্তির উদয়ে সাহস জোগাবেন৷